পৌরসভার সাধারণ তথ্য মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার অবস্থান, এলাকা ও জনসংখ্যা
ইতিহাসঃ মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাচীন বাংলার গৌরবময় স্থান বিক্রমপুরের অংশ। মুন্সীগঞ্জ সে সময়ে একটি গ্রাম ছিল ইদ্রাকপুর। কথিত আছে, মোঘল শাসন আমলে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হায়দার হোসেন নামে এক জন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোঘল শাসকদের দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। অত্যমত্ম সজ্জন ও জনহিতৈষী মুন্সী হায়দার হোসেনের নাম অনুসারে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সীগঞ্জ। ১৯৪৫ সালে বৃটিশ ভারতের প্রশাসনিক সুবিধার্থে মুন্সীগঞ্জ থানা ও মহকুমা হিসেবে উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালে ১ মার্চ মুন্সীগঞ্জ জেলায় রুপান্তরিত হয়। আর এই জেলা শহর ও মুন্সীগঞ্জ মহকুমার প্রধান শহরকে ২২-০১-১৯৭২খ্রি. তারিখে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুন্সীগঞ্জ মহকুমার শিলমন্দী, দেওভোগ, দড়িচর, বাগমামুদালী, গণকপাড়া, কোর্টগাঁও, পূর্ব মুক্তারপুর এবং মিরেশ্বরাইসহ সর্বমোট ৯টি মৌজার ১০.৮৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২২-০১-১৯৭২খ্রি. ০৩টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ‘খ’ শ্রেণীর পৌরসভা হলেও ২১-০৭-১৯৯৩খ্রি. ‘ক’’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়ে ০৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত হয়।
পৌর পরিষদঃ একজন নির্বাচিত মেয়র, ৯জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত ৩ জন মহিলা কাউন্সিলর সমন্বয়ে গঠিত পৌরপরিষদের নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা পরিচালিত হয়। বর্তমানে পৌর পরিষদ বিলুপ্ত থাকায় সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রশাসক (সরকারের উপ-সচিব পদমর্যাদার) ও প্রশাসকের কার্য সম্পাদনে সহায়তার জন্য গঠিত ০৮ (আট) জন সদস্য (সরকার নিযুক্ত জেলা পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা)’র সমন্বয়ে গঠিত কমিটি পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সীমানাঃ
উত্তরে ধলেশ্বরী নদী, দক্ষিণে মহাখালী ও চরকেওয়ার ইউনিয়ন, পূর্বে মেঘনার বর্ধিত অংশ, পশ্চিমে পঞ্চসার ইউনিয়ন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াঃ মুন্সীগঞ্জ জেলাটি ২৩:২৯ থেকে ২৩:৪৫ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০:১০ থেকে ৯০:৪৩ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। মুন্সীগঞ্জ সমতল এলাকা নয়। জেলার কিছু কিছু অঞ্চল যথেষ্ট উঁচু যদিও জেলায় কোনো পাহাড় নেই। মুন্সীগঞ্জের বেশির ভাগ এলাকা নিম্ন-ভূমি হওয়ায় বর্ষায় পানিতে অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। বার্ষিক তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১২.৭ মোট গড় বৃষ্টিপাত ২,৩৭৬মি.মি.। মুন্সীগঞ্জের জলবায়ু সমভাবাপন্ন আর্দ্রতাযুক্ত। এখানকার জলবায়ু ঋতু বিশেষে পরিবর্তনশীল। মুন্সীগঞ্জ বর্ষা প্রধান স্থান। গ্রীষ্মকালে এলাকার অনেক স্থান পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ঝড় বৃষ্টির প্রকোপও এই এলাকায় যথেষ্ট। শীতকালে শীতের তীব্রতা দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তত প্রবল নয়। এলাকাটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলভূক্ত।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ মুন্সীগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী প্রবাহিত হওয়াতে নদী পথে ঢাকা, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জ, বরিশাল’সহ দেশের নৌ-বন্দরসমূহের সহিত নৌ যোগাযোগ আছে। এছাড়াও সারা দেশের সাথে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে ছোট বড় কয়েকটি খাল বিদ্যমান। এটি একটি বন্যা কবলিত এলাকা।
প্রত্নতাত্বিক ঐতিহ্যঃ মুন্সীগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুর দুর্গ (১৬৬০), বর্জ্য যোগিনীতে পন্ডিতের ভিটা (অতীশ দীপঙ্কর এর জম্মস্থান) ও হরগঙ্গা কলেজের লাইব্রেরির কক্ষের ভিতরে আশুতোষ গাঙ্গুলীর মার্বেল মূর্তি।
খানা, হোল্ডিং ও জনসংখ্যাঃ
সর্বমোট হোল্ডিং সংখ্যাঃ ১৪,০৭৪টি (বেসরকারি ১৩৩৭৪ টি এবং সরকারি ১০০ টি)।
জনসংখ্যাঃ পুরুষ- ৫৮,৫২২জন, মহিলা- ৬১,৪৬৭জন = মোট ১,১৯,৯৮৯জন।
খানার সংখ্যাঃ ২৮,২৮৭টি।
অর্থনৈতিক অবস্থাঃ মুন্সীগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাট, গম এবং অন্যান্য সবজি উৎপাদন করে। এখানে প্রচুর আঁখ এবং কলা ও উৎপাদন হয়। সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি নৌপথে যোগাযোগের জন্য মুন্সীগঞ্জ পৌর এলাকায় একটি বড় লঞ্চ/স্টিমার টার্মিনাল রয়েছে। অতএব, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় বাণিজ্য কেন্দ্র, জেলা ও পৌরশহর।